• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪২৯
বাংলাদেশের মাটিতেই চিরনিদ্রায় ফাদার রিগন

মোংলায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত হলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ইতালির নাগরিক ফাদার মারিনো রিগন

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

বাংলাদেশের মাটিতেই চিরনিদ্রায় ফাদার রিগন

  • বাগেরহাট প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২১ অক্টোবর ২০১৮

হাজারো ভক্ত-অনুরাগীদের হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসায় মোংলায় সমাহিত হলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ইতালির নাগরিক ফাদার মারিনো রিগন। তার অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী আজ রোববার বিকেলে বাগেরহাট জেলার মোংলার শেলাবুনিয়ায় সেন্টপল্স গীর্জার পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

ফাদার রিগনের মৃত্যুর এক বছর পর সরকারিভাবে তার মরদেহ ইতালি থেকে ভোরে বাংলাদেশে আনা হয়। সকাল ৯টা ৪৮মিনিটে তার কফিনবাহী হেলিকপ্টারটি মোংলার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে অবতরণের পর ফাদার রিগানের কফিনটি গ্রহন করেন খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ও বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস।

মোংলা উপজেলা পরিষদের মাঠে রিগনের কফিনে সর্বস্তরের হাজার-হাজার মানুষ শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সেখানে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। দুপুরে ফাদার মারিনো রিগনের প্রতিষ্ঠিত সেন্টপল্স উচ্চ বিদ্যালয় এবং সেন্ট পল্স হাসপাতালে মরদেহ নেয়া হলে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীসহ হাজারো অনুরাগীরা কফিনে শেষ শ্রদ্ধা জানায়।

ফাদার মারিনো রিগনকে সমাধিস্থ করার সময়ে তার কফিনের সঙ্গে ঢাকা থেকে মোংলায় আসা ইতালির রাস্ট্রদূত মিষ্টার মারিও পালমা, দেশটির বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্মকর্তা ইকবাল আহমেদ, খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকসহ কয়েক হাজার ভক্ত-অনুরাগী উপস্থিত ছিলেন।

ফাদার মারিনো রিগন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি অসুস্থ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও সেবা প্রদানের পাশাপশি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তাকে মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৯ সালে সরকার তাকে Friends of Liberation War Honour পদক প্রদান ও বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয়া হয়।

ফাদার রিগন মোংলায় থাকা অবস্থা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চলাচলের শক্তি হারিয়ে ফেললে ২০১৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি তার স্বজনেরা এসে তাকে ইতালিতে নিয়ে যান। ইতালিতে মৃত্যু হলে তার লাশ বাগেরহাটের মোংলার সেন্ট পল্স গীর্জার পাশে সমাহিত করতে হবে এই শর্তে তিনি স্বজনদের সঙ্গে তার দেশে যেতে রাজী হন। গত বছরের ২০ অক্টোবর ইতালিতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধৃ ফাদার রিগন।

ইতালির নাগরিক ফাদার রিগন ১৯২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহন করেন। মাত্র ২৮ বছর বয়সে খৃষ্ট্রধর্ম প্রচারে ১৯৫৩ সালে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকায় আসেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি গোপালগঞ্জের বানিয়ারচর গির্জায় ছিলেন। সেসময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাসহ অসুস্থ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও সেবা প্রদানের পাশাপশি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। দেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেশ স্বাধীনের পর তিনি মোংলার শেলাবুনিয়ায় স্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন।

দীর্ঘ সময়ে বাগেরহাটের মোংলায় অবস্থানকালে ফাদার মারিনো রিগন জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ সেন্টপল্স উচ্চ বিদ্যালয়সহ ১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সেন্টপল্স হাসপাতালসহ প্রতিষ্ঠা করেন। নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন সেন্ট পল্স সেলাই কেন্দ্র। যেখান থেকে নারীদের হাতে সেলাই করা নকশীকাঁথা এখন বিদেশে রফতানি করা হয়।

বাগেরহাটের আমজনতার হৃদয় জয় করে নেয়া ফাদার মারিনো রিগন ইতালিয়ান ভাষায় অনুবাদ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলিসহ ৪০টি কাব্যগ্রন্থ, লালন সাঁইয়ের তিনশত পঞ্চাশটি গান, জসীম উদ্দীনের নক্সীকাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট ছাড়াও এদেশের খ্যাতিমান কবিদের অসংখ্য কবিতা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads